শুরুতেই কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকা উখিয়া-টেকনাফ সংসদীয় আসনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত শুক্রবার একদিনেই সংঘটিত দু’টি ঘটনা নিয়ে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের নির্বাচনী পরিস্থিতি অশান্ত হতে শুরু করে। ঘটনার জের ধরে শনিবার এমপি আবদুর রহমান বদি এক প্রতিবাদ সভায় প্রতিপক্ষ বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর উদ্দেশে হুংকার ছেড়েছেন। প্রকাশ্যে জনসভায় এমপি বদির এরকম হুংকারে এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। এমনকি ভয়ে টেকনাফের বিএনপি সমর্থক পরিবারের লোকজন এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে এমপি আবদুর রহমান বদি প্রতিপক্ষ বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি প্রার্থী এবং কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী গতকাল রবিবার কক্সবাজারের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের নিকট এক লিখিত অভিযোগনামা দায়ের করেছেন। শাহজাহান চৌধুরী তাতে উল্লেখ করেন যে, তিনি কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে চার বার এমপি ছিলেন।
বিএনপি’র মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী শাহাজাহান চৌধুরী বলেন- ‘এমপি আবদুর রহমান বদি কোনো প্রার্থী না হয়েও তার স্ত্রীর পক্ষে গত শনিবার নির্বাচনী জনসভায় আমার গাড়ি ভাঙচুর করবে, আমাকে টেকনাফ যেতে দেবে না এমনকি আমার প্রাণনাশ করবে বলে হুমকি দিয়েছেন।’
শাহজাহান চৌধুরী আরো বলেন, এমপি বদি উক্ত জনসভায় তার স্ত্রীকে যারা ভোট দিবেনা তাদের নাম-ঠিকানা তার নিকট জমা দিতে নির্দ্দেশ দিয়েছেন। এমপি বদি এলাকায় এভাবে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এমন এক ভয়াল পরিস্থিতিতে লোকজন নির্বাচনী এলাকায় যেতেও সাহস পাচ্ছে না। ফলে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণার আমেজের পরিবর্তে বিরাজ করছে চরম আতংক-জানান বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী।
অপরদিকে এমপি আবদুর রহমান বদি উখিয়া উপজেলা সদরে তার গাড়িতে ‘গুলি’ বর্ষণের প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীকে হুমকি-ধমকি দিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। প্রায় সাড়ে চার মিনিটের ভিডিওটি জনমনে দারুণভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উক্ত ভিডিও’র বক্তব্যে প্রতিপক্ষ বিগত চারবারের এমপি এবং বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিক শাহজাহান চৌধুরীকে এমপি বদি ‘তুই-তামারি’ করে সম্বোধন করতে শুনা যায়। সেই সঙ্গে এমপি বদির স্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি প্রার্থী শাহিন আক্তারসহ তার পরিবার নিয়ে অহমিকাকে লোকজন ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি আগামী ৩০ ডিসেম্বর এমপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীকে এমপি বদি বৈদ্যালী দেখাবেন বলে যে হুংকার দিয়েছেন তা নিয়েও জনমনে নেতিবাচক বক্তব্য হিসাবে দেখা দিয়েছে।
অথচ কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) সংসদীয় আসনে ভোটযুদ্ধে মাঠ সরব হয়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে। বড় দুই দলের মনোনীত দলীয় প্রার্থীরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের সঙ্গে কৌশল বিনিময় ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এমপি বদির লাগামহীন বক্তব্যে সরকারি দলের ভাবমূর্তিও এখন পড়েছে প্রশ্নের মুখে। এমপি বদির এ রকম বক্তব্য নিয়ে দলের লোকজনও এক প্রকার অসন্তুষ্ট।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ইয়াবা তালিকায় নাম থাকায় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র দণ্ড প্রাপ্তসহ নানা কর্মকাণ্ডে দেশব্যাপী সমালোচিত হওয়ায় দলের পক্ষ থেকে তাকে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তার পরিবর্তে নৌকার টিকিট পেয়েছেন বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী। উখিয়ার একটি সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও বদির স্ত্রী হওয়ায় দলের একটি পক্ষ বরাবরই তার পক্ষে নিরব রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১০ বছরের শামনামলে উখিয়া-টেকনাফে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১০ বছরে যে পরিমাণ উন্নয়ন এ জনপদে হয়েছে বিগত যেকোনো সময়ে তা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন সাধারণ ভোটাররা। সে হিসেবে ভোটাররা এবারও দল, মত ও ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে নৌকায় ভোট দেবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে উখিয়া টেকনাফের নতুনসহ সাধারণ ভোটারদের ভোটে এবারও নৌকার জয়ের সম্ভাবনা বেশি। তবে নির্বাচনী মাঠে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এনিয়ে দলের নেতাকর্মীরাও বিব্রতবোধ করছেন।
গত শনিবার উখিয়ায় তার দম্ভোক্তিমূলক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন দলীয় লোকজন। তিনি বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তিনি টেকনাফ থানা পুলিশের ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করছেন বলেও বিএনপি নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তুলেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ট নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভোটে নৌকা জিতবে তাতে কোনো সন্দিহান নেই। শেখ হাসিনা সরকার যে হারে উন্নয়ন করেছেন তাতে সাধারণ মানুষ আবারও শেখ হাসিনার নৌকাকে বিজয়ী করবে। বদি বা তার স্ত্রীকে দেখে নয়, এ আসনের জনগণ নৌকা দেখে ভোট দেবে। নৌকার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তবে, উন্নয়নের প্রতীক নৌকার গণজোয়ারের মাঝেও বর্তমান সংসদ সদস্য বদির বেশ কিছু কর্মকাণ্ড বিতর্ক বাড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নৌকার জয়ের সম্ভাবনা যেখানে প্রখর, সেখানে প্রতিপক্ষের লোকজনকে হুমকি, ধমকি দিয়ে বা পুলিশকে ব্যবহার করে ভোট আদায় করার দরকার আছে বলে মনে করছি না। বরং বদির এসব কর্মকাণ্ডে একদিকে দল যেমন বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হবে তেমনি তার কর্মকাণ্ডে নির্বাচন কমিশনও বিব্রতবোধ করতে পারেন। তাতে দলের ভাবমূর্তিও নষ্ট হবে।’